সড়কের পিচ ও পাথর উঠে গেছে। সৃষ্টি হয়েছে খানাখন্দের। কোথাও কোথাও কাদা জমে আছে। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের অভাবে কুলাউড়া উপজেলার দক্ষিণাঞ্চলের পৃথিমপাশা ও কর্মধা ইউনিয়নের যোগাযোগের অন্যতম প্রধান সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সাত কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ওই সড়কের কার্পেটিং উঠে বড় বড় গর্তে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। সড়কটির বেহাল হওয়ায় চলাচলকারী যানবাহন ও যাত্রীদের প্রতিনিয়ত চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সড়কগুলো মেরামতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উদাসীন। পৃথিমপাশা ইউনিয়নের রবিরবাজার থেকে সদপাশা হয়ে কর্মধা ইউনিয়নের মুরইছড়া বাজার পর্যন্ত সাত কিলোমিটার সড়কটি ২০১৭-১৮ সালে সর্বশেষ সংস্কারকাজ করা হয়। এরপর আর সংস্কার না হওয়ায় সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সংস্কারের অভাবে এই সড়কের কর্মধা ইউনিয়নের বুধপাশা গ্রামের মোড়ারবাজার এলাকায় তিনটি স্থানে ৩০ থেকে ৩৫ ফুট, একই গ্রামের দানুরমোড়া এলাকায় তিনটি স্থানে প্রায় ৫০ ফুট, পৃথিমপাশা ইউনিয়নের কানিকিয়ারি গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় ২০ থেকে ২৫ ফুট ভেঙে গিয়ে দেড় থেকে দুই ফুট গভীর গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন জায়গার ইট ও পিচ উঠে গেছে।
জানা গেছে, এই সড়কটি দিয়েই পৃথিমপাশা ইউনিয়নের কানিকিয়ারি, রাজনগর, গণকিয়া, ধামুলী, শিকড়িয়া, লুতাবিল ও কর্মধা ইউনিয়নের বুধপাশা, দিগলকান্দি, ফটিগুলি, পূর্ব ফটিগুলি, টাট্রিউলী, দোয়ালগ্রাম, রাজানগর চা-বাগান, মুরইছড়া চা-বাগান, মুরইছড়া বস্তি, ১২-১৫টি খাসিয়া পান পুঞ্জিসহ দুই ইউনিয়নের ২০/২২ গ্রামের লোকজনকে উপজেলা সদরে যাতায়াত করতে হয়। এসব এলাকার শিক্ষার্থীরা এই সড়ক ব্যবহার করে কুলাউড়া সরকারি কলেজ, বি.এফ শাহীন কলেজ, লংলা আধুনিক ডিগ্রি কলেজ, আলী আমজাদ উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, রবিরবাজার মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করেন। এছাড়া এখানে মূড়াইছড়া সীমান্তবর্তী বিজিবি ক্যাম্পও রয়েছে।
এ সড়ক দিয়ে নিয়মিত চলাচলকারী সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক ফিরুজ আহমদ, ফারুক মিয়া, সামিম মিয়া, লিয়াকত মিয়াসহ অনেকেই জানায়, সড়কে দীর্ঘদিন ধরে কোনো মেরামত কাজ করা হয়নি। সড়কের কার্পেটিং উঠে ইটের খোয়া বের কাঁচা মাটির সড়কে পরিণত হয়েছে। সড়কটির দুই পাশে ঢালের মাঝবরাবর গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এতে একটি গাড়ি আরেকটিকে পাশ কাটিয়ে যেতে পারছে না। বিভিন্ন ভারী যানবাহন, অটোরিকশা, ভ্যান, রিকশা চলছে সড়কে। এতে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়। প্রায় সময় গাড়ীর এস্কেল ও চাকা বিকল হয়।
স্থানীয় বুধপাশা স্কুল বাজারের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও সমাজকর্মী এম. মঈনুল ইসলাম মছলু বলেন, মুরইছড়া-রবিরবাজার সড়কের বেহাল অবস্থার কারনে বছরের পর বছর ধরে বিশাল জনগোষ্ঠীর দূর্ভোগ, দেখার যেন কেউ নেই! কুলাউড়া সদর ও রবিরবাজার থেকে এ সড়কের শেষদিকে সীমান্তবর্তী মুরইছড়া ইকো পার্কের অবস্থান। এলাকার লোকজন ছাড়াও বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকদের যাতায়াত রয়েছে সড়কটি দিয়ে। দীর্ঘদিন থেকে অবহেলিত সড়কটি দ্রুত সংস্কার করনের দাবি জানাই কর্তৃপক্ষের কাছে।
পৃথিমপাশা ইউপি চেয়ারম্যান জিমিউর রহমান চৌধুরী বলেন, দুটি ইউনিয়নের মধ্যবর্তী গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি দীর্ঘদিন থেকে মেরামত না করার কারণে বিভিন্ন স্থানে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এই সড়কটির মেরামত কাজ করার জন্য উপজেলা পরিষদের মাসিক সভায় একাধিকবার আলোচনা করেছি। উপজেলা প্রকৌশলী আশ্বস্ত করেছেন, শিগগিরই সড়কটি মেরামত কাজ করার উদ্যোগ নেবেন।
এলজিইডির কুলাউড়া উপজেলা প্রকৌশলী তারেক বিন ইসলাম জানান, ‘আরসিআইপি প্রজেক্টের আওতায় ওই সড়কসহ উপজেলার অন্য এলাকায় ২০ কিলোমিটার সড়কের মেরামত কাজের জন্য একটি প্রস্তাবনা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবটি অনুমোদন হলে টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষে সড়কের মেরামত কাজ শুরু করা হবে।
সুত্র, ইনকিলাব