ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও অতি ভারি বর্ষণের কারণে মৌলভীবাজারে আগাম বন্যা দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া কুলাউড়া উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়নের শিকড়িয়া এলাকায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) বাঁধায় নির্মাণকাজ বন্ধ থাকা মনু নদীর বন্যা প্রতিরক্ষা বাঁধের (বেড়িবাঁধ) ভাঙন দিয়ে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। এতে প্লাবিত হয় পৃথিমপাশা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম।
এদিকে, বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ায় বিকেল ৫টা পর্যন্ত পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্যানুযায়ী, মনু রেলওয়ে ব্রিজ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
মৌলভীবাজার শহরের চাদনীঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ৭২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে ও ধলাই নদীর রেলওয়ে ব্রিজ পয়েন্ট বিপৎসীমার ১৮২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিলো।
এ ছাড়া জুড়ী নদীর পানি জুড়ীতে বিপৎসীমার ১৬৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সরেজমিনে পৃথিমপাশা ইউনিয়নের শিকড়িয়া বেঁড়িবাধ এলাকায় দেখা যায়, ২০২৪ সালের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ১০০ ফুট ভাঙনের কাজ বিএসএফের বাঁধায় শুরু হয়নি। মনু নদীর পানি বাড়ায় সেই বাঁধ দিয়ে পানি হু হু করে লোকালয়ে প্রবেশ করে।
সোমবার দুপুরের পর থেকে মনু নদীর পানি কমায় লোকালয় থেকে পানি কমতে শুরু করেছে। তবে লাগাতার বৃষ্টি হলে আবারো ভাঙনকৃত বেঁড়িবাঁধ দিয়ে পানি প্রবেশ করলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে মানুষের ঘরবাড়ি ও কৃষিজমি।
কুলাউড়ার পৃথিমপাশা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ জানান, যখনই নদীতে পানি বাড়ে তখন এই নদীটি পৃথিমপাশা, টিলাগাঁও, হাজীপুর ও শরীফপুর ইউনিয়ন দিয়ে ভাঙন দেখা দেয়। বন্যা হলে হাজার হাজার মানুষের ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
পৃথিমপাশা ইউনিয়নের শিকড়িয়া এলাকায় ভারতীয় বিএসএফের বাঁধার কারণে বন্ধ থাকা বেড়িবাঁধের কাজ আটকে আছে। রবিবার রাতে মনু নদীর পানি অতিরিক্ত বেড়ে গেলে ওই স্থান দিয়ে পানি প্রবেশ করে শিকড়িয়া, গণকিয়া, আমুলী, আলীনগর, ধলিয়া, শালিকা গ্রামে পানি প্রবেশ করে।
তিনি আরো জানান, সড়ক বিভাগ রাজাপুর ব্রিজের সংযোগ সড়কের শালিকা এলাকায় একটি কালভার্টের জন্য রাস্তা কেটেছিল। মনু নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় কালভার্টের পাশ দিয়ে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করেছিল। স্থানীয়দের নিয়ে ঠিকাদারের সহযোগিতায় তা মেরামত করা হয়েছে।
বন্যা আতঙ্কে দিন কাটছে এতদ অঞ্চলের লোকজনের।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. খালেদ বিন অলিদ বলেন, ‘কুলাউড়ায় এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিরক্ষা বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণের খবর পাওয়া যায়নি। তারপরও সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। পৃথিমপাশা ইউনিয়নের শিকড়িয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ বেড়িবাঁধের কাজ গতবছর শুরু করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বিএসএফের বাঁধায় কাজ শুরু করা যায়নি। যথাসময়ে কাজ শুরু না করায় ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ দিয়ে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। শিকড়িয়া এলাকার বেঁড়িবাঁধসহ শরীফপুরের চারটি স্থানে কাজ শুরুর জন্য যৌথ নদী কমিশন বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বারবার ভারতে যোগাযোগ করা হচ্ছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ভারতের পক্ষ থেকে কোন অনুমোদন আসেনি।’
কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌরসভার প্রশাসক মো. মহিউদ্দিন বলেন, ‘বন্যার আগাম প্রস্তুতি হিসেবে উপজেলায় ৩৫টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। কুলাউড়ার গোগালীর বাঁধ ভেঙে পৌরসভার ৬ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডের জয়পাশা উত্তর ও দক্ষিণ এবং দানাপুর গ্রাম প্লাবিত হলে জয়পাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়। সেখানে ৬ টি পরিবার আশ্রয় নেয়। পরে ওই ৬ পরিবারসহ ২০ টি বন্যার্থ পরিবারের মাঝে ১৪ কেজি করে চাল, ডাল, আলু ও শুকনো খাবারসহ ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়ে। সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।’
সুত্র, কালের কন্ঠ।